ইসলামের দৃষ্টিতে ভালবাসা
|
২৮ মাঘ ১৪২৫ |
Sunday, February 10, 2019
মোহাম্মদ আব্দুল আজিজ : ইসলাম মানুষের স্বভাবজাত ধর্ম। মহান আল্লাহ মানুষকে যে সহজাত প্রকৃতি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন তার নাম হলো ফিতরাত। একটি হাদিস থেকে জানা যায় যে প্রতিটি শিশুই সহজাত প্রকৃতি তথা ইসলামের উপর জন্মগ্রহণ করে। ইসলামের এক অর্থ আত্মসমর্পণ করা। এ জন্য প্রতিটি মানুষের মধ্যে উচ্চতর শক্তির সামনে আত্মসমর্পণের সহজাত প্রেরণা পরিলক্ষিত হয়। মানুষের এ সহজাত প্রেরণার চাহিদা এটাই ছিল যে, মানুষ এমন এক মহান ও শাশ্বত সত্তার শাসনে নিজকে উৎসর্গ করবে যিনি সকল শক্তি ও ক্ষমতার উৎস, মানুষের জ্ঞান বিজ্ঞানের উর্ধ্বে এবং মানুষের সহজাত প্রেরণা ও উদ্দীপনাকে তৃপ্ত করতে সক্ষম। এই পূর্ণতম সত্তাই হলো মহান রাব্বুল আলামীন। যিনি বিশ্ব জগতের প্রতিপালক। ইরশাদ হচ্ছে ‘‘তুমি একনিষ্ঠ হয়ে নিজকে দ্বীনে প্রতিষ্ঠিত কর। আল্লাহর প্রকৃতির অনুসরণ কর, যে প্রকৃতি অনুযায়ী তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নাই। ইহাই হলো সরল দ্বীন। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না। (সুরা রুম আয়াত নং-৩০)।
বাংলাতে ভালবাসা, ইংরেজিতে খড়াব আরবীতে ‘মাহাব্বাত’ বলা হয়। ভালবাসা একটি হার্দিক কর্ম। কোন কিছুর প্রতি মনের আকর্ষণকে ভালবাসা বলে। ভালবাসা কতক সময় গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত আবার কতক সময় কঠিনতম অপরাধ। পিতা-মাতাকে ভালবাসা, স্বামী-স্ত্রী সন্তানদেক ভালবাসা, ভাই বোনকে ভালবাসা আত্মীয় স্বজন, সঙ্গী-সাথী, বন্ধু-বান্ধব, ভাল মানুষ, সকল মানুষকে ভালবাসা সর্বোপরি মহান আল্লাহর সৃষ্টিকে ভালবাসা ইসলাম নির্দেশিত কাজ। মানব জাতিকে টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে মানুষের মধ্যে এ জৈবিক ভালবাসা মহান আল্লাহর দান। এরূপ ভালবাসার কারণে মানুষ পরিবার গঠন করে, সন্তান গ্রহণ করে, পরিবারের জন্য অনেক কষ্ট করে, এভাবেই মানব জাতি পৃথিবীতে টিকে আছে। মানব সভ্যতা টিকিয়ে রাখার জন্য এরূপ ভালবাসাকে একমুখী বা পরিবারমুখী করা অত্যাবশ্যকীয়। যদি কোন সমাজে বা রাষ্ট্রে পারিবারিক সম্পর্কের বাইরে নারী-পুরুষের এরূপ ভালবাসা সহজ লভ্য হয়ে যায়, তাহলে সমাজে পারিবারিক সংরক্ষণ অসম্ভব হয়ে পড়ে এবং আস্তে আস্তে সে সমাজে ধ্বংস নেমে আসে। এরূপ ভালবাসা অধিকাংশ ক্ষেত্রে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন সহ ব্যভিচারের পথ উন্মুক্ত করে দেয়। ফলে অসংখ্য মানুষ ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এ জন্য সকল সভ্য মানুষ ব্যভিচার ও বিবাহোত্তর ‘ভালবাসা’ কঠিনতম অপরাধ ও পাপ বলে গণ্য করেছে। মুসলিম সমাজেও এর প্রভাব পড়ছে। মুসলমান হয়েও বিভিন্ন কারণে এরূপ অনৈতিক কার্যকলাপ থেকে ছেলে মেয়েদেক হেফাজত করতে পারছে না। বিপরীত লিঙ্গ স্বাভাবিকভাবেই আকর্ষিত। যার কারণে ধর্মীয় দৃষ্টিতে এ বিষয়ে সজাগ থাকার তাগিদ দেয়া হয়েছে। বর্তমান সমাজে বেহায়াপনা অশ্লীলতা দিন দিন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে অনাকাঙ্খিত দুঃখজনক ঘটনা ব্যাপকভাবে ঘটছে। প্রতিদিন এরূপ অসংখ্য ঘটনা বিভিন্ন পেশার পত্রিকায় দেখা যায়। এ জন্য পবিত্র কুরআনের নির্দেশ হলো সকল প্রকার অশ্লীলতা বর্জন কর তা প্রকাশ্য হোক আর অপ্রকাশ্য হোক। জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধন হয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেড়েছে। শিক্ষার্থী বেড়েছে সাথে সাথে নৈতিক অবক্ষয়ের হারও বেড়েছে। এ থেকে আমাদেক সজাগ থাকতে হবে। নতুবা আমাদের জীবনে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আল্লাহ কর্তৃক বরাদ্দ হবে যা কেউ রদ করতে পারবে না।
লক্ষ্য করুন আজ থেকে ৪০ বছর আগে মানুষ এইডস নামক মরণঘাতি সম্পর্কে কিছুই জানতো না। ১৯৮১ সালে সর্বপ্রথম এই ভাইরাসটি ধরা পড়ে। বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেন যে, অবাধ যৌন মিলন থেকে এর উৎপত্তি। এ জন্য যে সমাজে নারী-পুরুষের অবাধ মেলা-মেশা বেশি, অবাধ যৌনাচার বেশি চলে তাদের উপরই এইডস নামক মারাত্মক ব্যাধি নেমে এসেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ধারণা বাংলাদেশে প্রায় ২০,০০০ জন লোক এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। অন্যান্য দেশে এ রোগে আক্রান্ত সংখ্যা প্রচুর। প্রতিদিন এই ভাইরাস ১৫ হাজার লোককে আঘাত করছে। মানব জাতির কল্যাণের জন্য পবিত্র ইসলাম নর-নারীর মধ্যে স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কের বাইরে কোন দৈহিক মিলন অনুমোদন করে না। ভালবাসার নামে, আধুনিকতার নামে নারী-পুরুষের অবাধ মেলা-মেশা, বেহায়াপনা ও অশ্লীলতা বিশেষ করে- বিবাহ বহির্ভূত ভালবাসা অনৈতিক কাজ। এ থেকে আমাদেক দুরে থাকতে হবে। ছেলে মেয়েদেক যতœ নিতে হবে, অবাধ মেলা মেশার কুফল সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। নতুবা অন্যান্য দেশের মত আমাদের দেশেও অবৈধ ভালবাসা এইডস রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি করবে। আল্লাহ আমাদেক রক্ষা করুন। আমীন।
লেখক ঃ খতিব, উপশহর মসজিদ বগুড়া।
মুহাদ্দিস, উম্মুল কুরআন কওমি মাদ্রাসা, বগুড়া।