কে এই এসআই মাসুদ?
|
৪ মাঘ ১৪২২ |
Sunday, January 17, 2016
পুলিশের উপ-পরিদর্শক মাসুদ শিকদার। রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় কর্তব্যরত অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা গোলাম রাব্বীকে নির্যাতনকারী হিসেবে অভিযুক্ত। নিজ এলাকা ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়াতেও এক আতঙ্কের নাম মাসুদ। তবে এলাকায় তার নাম আব্দুল্লা। ইতোমধ্যেই এসআই মাসুদ শিকদারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার সোয়াইতপুর গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা ব্যাংক কর্মকর্তা গোলাম রাব্বীকে নির্যাতনকারী আলোচিত পুলিশের উপ-পরিদর্শক মাসুদ শিকদার। কনস্টেবল পদে পুলিশে যোগদানের সময় একেবারে অসচ্ছল থাকলেও এখন তিনি এলাকায় বিত্তশালী হিসেবে পরিচিত। ছুটিতে গেলে বাড়িতেই মাদকসেবীদের নিয়ে জমজমাট আড্ডা দিতেন তিনি।
আর আধিপত্য বিস্তার করতে সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষকতা সহ নিজ এলাকায় গড়ে তোলে এক ক্যাডার বাহিনী। এই বাহীনি দ্বারাই এলাকার বাইরে থাকলেও খবরদারী বহাল রাখতো তিনি। সাধারণ মানুষকে নানাভাবে হয়রানি করা সহ এলাকার সকল ধরনের অপরাধে মাসুদের ক্যাডার বাহীনি জড়িত বলে অভিযোগ করেছে এলাকাবাসীর। এ বাহীনির অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হলেও এতোদিন কেউ মুখ খোলতে সাহস পায়নি। এ অবস্থায়, তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন সুশীল সমাজসহ মুক্তিযোদ্ধারা।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা শুনেছি সে আন্ডারগ্রাউন্ড একটি বাহিনী তৈরি করেছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে এ ঘটনার উপযুক্ত শাস্তি হোক এটা আমরা চাই।’
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার এনায়েতপুর ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মো. জোনাব আলী বলেন, ‘সে যদি সত্যিকারভাবে দোষী হয়ে থাকে তাহলে আমরা এর বিচার চাই।’
এদিকে, মাসুদ শিকদারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ তার ক্যাডার বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন সুশীল সমাজসহ মুক্তিযোদ্ধারা।
এসআই মাসুদের জীবন বৃত্তান্ত:
মাসুদ সিকদারের বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার এনায়েতপুর ইউনিয়নের সোয়াইতপুর গ্রামে। বাড়ি থেকে ফুলবাড়িয়া উপজেলা ২০/২১ মাইল দূরে। বাবার নাম সিরাজ উদ্দিন শিকদার। বাবার পেশা ছিল কৃষি কাজ। ২০০৫ সালে তিনি মারা যান। তিন ভাই’র মধ্যে মাসুদ শিকদার বড়। মেঝ ভাই একটি বিনোদন পার্কে চাকরি করেন। ছোট ভাইকে মালদ্বীপ পাঠিয়েছেন মাসুদ। যাওয়ার সব খরচও তিনিই বহন করেছেন।
মাসুদের চাকুরি জীবন:
বিগত ২০০১ সালে পুলিশের কনস্টেবল পদে যোগদান করেন মাসুদ শিকদার। কয়েকবার এইচ এস সি পরীক্ষা দিয়েও পাস করতে পারেননি। পুলিশে যোগদানের পর উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এইচ এস সি ও ডিগ্রি পাস করেন। চাকুরিতে যোগদানের ৮ বছর পর ২০০৯ সালে এ এস আই পদে পদোন্নতি হয়। এরপর ২০১৩ সালে এস আই হন।
ডাকাত সর্দারের মেয়ের সাথে প্রেম-বিয়ে:
এস আই মাসুদ শিকদার এলাকায় আব্দুল্লাহ নামে পরিচিত। পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরিতে যোগদানের পর ২০০২ সালে পাশের গ্রাম সোয়াইতপুর পূর্বপাড়ার ডাকাত সর্দার আনসারের মেয়ে রুমার সঙ্গে প্রেম করেন এবং তাকে বিয়ে করেন।
কোটিপতি ও নিজস্ব বাহিনী:
মাসুদ ২০০৯ সালে এস আই হওয়ার পর অর্থের জন্য বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। চাকুরি দেয়ার জন্য এলাকাসহ পাশের থানার মানুষের কাছ থেকে লাখ-লাখ টাকা নেন। কিছু লোককে চাকুরি দিলেও অনেকের টাকা মেরে দিয়েছেন। এছাড়া এলাকার যুবকদের নিয়ে তৈরি করেন শক্তিশালী একটি বাহিনী। বাহিনীর যুবকদের দিয়ে ঢাকা ও এলাকায় চাঁদাবাজি করাতেন।
এছাড়া এলাকায় মাদক ব্যবসারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ছুটি নিয়ে বাড়ি গেলে সোয়াইতপুর বাজারের বাসায় চলতো রমরমা মাদক সেবন ও বিক্রি। এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ এলাকাবাসীকে মূল্যায়ন করেন না তিনি। গ্রামের বাড়িতে টিনশেড ঘর থাকলেও সোয়াইতপুর বাজারে রয়েছে একটি বিশাল বাউন্ডারি করা বাড়ি। যুবকদের টাকা-পয়সা দেয়ার ভাব দেখলে মনে হবে সে কোটিপতি।
সোয়াইতপুর গ্রামের মানুষও মাসুদ ও তার ভাইদের দেখলে আতঙ্কে থাকেন। কখন কী করে বসেন তারা। স্থানীয় পুলিশ কোন কিছু করার আগে মাসুদের কাছে জিজ্ঞাসা করে নেয়।
ঘটনার পর মাসুদ শিকদারের মেঝ ভাই দম্ভোক্তি করে এলাকাবাসীকে বলেন, ‘ভাইয়ের কিছুই হবে না। তাকে শুধু ক্লোজড করা হয়েছে। মিডিয়াকে আইওয়াস করার জন্য এটা করা হয়েছে। আমার ভাইয়ের হাত অনেক লম্বা। কয়েকদিন পর সব সমাধান হয়ে হবে।’
এদিকে, ব্যাংক কর্মকর্তা গোলাম রাব্বিকে নির্যাতন ও ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবির ঘটনা ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পারেন এলাকাবাসী। এটা জানাজানি হওয়ার পর এলাকাবাসী দাবি করেন, কিভাবে তিনি কোটিপতি হলেন তার তদন্ত করা উচিত।
আরও অভিযোগ
মাসুদ শিকদারের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। কলাবাগান ও ধানমন্ডি থানায় দায়িত্ব পালনের সময় একাধিক ছাত্রসহ সাধারণ মানুষকে ধরে ইয়াবাসহ মাদক ধরিয়ে দিয়ে, বাবা-মাকে ফোন করে লাখ-লাখ টাকা কামিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কাঙ্খিত টাকা না পেলে ৫৪ ধারায় আদালতে পাঠাতেন।
২০১৩ সালে চঞ্চল নামের এক ছাত্রকে ধরে নিয়ে টাকা না পেয়ে মারধর করেন। তার বাবা গরু বিক্রি করে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে নেন। এছাড়াও এক হাউজিং ব্যবসায়ীকে আটক করে মিথ্যা মামলা দিয়ে লক্ষাধিক টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, গত ৯ জানুয়ারি রাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা গোলাম রাব্বীকে তল্লাশির নামে ৫ ঘণ্টা আটকে রেখে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার এসআই মাসুদের নেতৃত্বে নির্মম নির্যাতন চালায় পুলিশ।