সর্বশেষ সংবাদ: জাতীয় শিক্ষাক্রম অনুসরণ করছে ইবতেদায়ী মাদ্রাসা: শিক্ষামন্ত্রী রূপগঞ্জে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় যুবককে কুপিয়ে জখম করেছে কিশোর গ্যাং সদস্যরা সাবেক প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মুরাদ কানাডা-আমিরাতে ঢুকতে না পেরে ফিরে আসছেন ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে ——- তারা‌বো পৌরসভার মেয়র হা‌সিনা গাজী সোনারগাওঁয়ের সাদিপুর ইউ,পিতে ৩ নং ওয়ার্ডের মেম্বার নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকায় র‌্যাব-১১ এর অভিযানে ০৪ পরিবহন চাঁদাবাজ গ্রেফতার রূপগঞ্জে পুলিশ পরিদর্শকসহ ব্যবসায়ীকে হানজালা বাহিনীর হুমকি, ইটপাটকেল নিক্ষেপে দুই পুলিশ সদস্য আহত রূপগঞ্জে মন্ত্রীর পক্ষে ছাত্রলীগ নেতারদের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হলেন আহমদে জামাল ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই দেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু

সকল শিরোনাম

“এপেক্স ইন্টারন্যাশনাল জার্নালিস্ট কাউন্সিল” এর বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের কমিটি গঠন ভুলে ভরা এনআইডি ইসরায়েলে মুহুর্মুহু রকেট নিক্ষেপ হিজবুল্লাহর ৪৩ পণ্য রপ্তানিতে মিলবে প্রণোদনা যেকারণে পুরুষদের শুক্রাণুর মান কমে যাচ্ছে ইফতারে পুদিনা পাতা খেলে পাবেন ৮ উপকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল হতে পারে ঢাকার কড়াইল বস্তিতে আগুন বিএনপি নেতারা কেন স্ত্রীদের ভারতীয় শাড়ি পোড়াচ্ছেন না, প্রশ্ন প্রধানমন্ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বনাম বইপড়া বাংলা নববর্ষ উদযাপনে অপপ্রচার চালালেই ব্যবস্থা : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শাহরুখ কন্যার গোসলের ভিডিও ভাইরাল ‘ভালোবাসা’ এক সংজ্ঞাবিহীন অনুভূতির নাম ২৬ দিনের ছুটিতে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এপ্রিলে বাংলাদেশ সফরে আসছেন কাতারের আমির ঈদকে ঘিরে সরব সিরাজগঞ্জের তাঁতপল্লী ফোটানো চা খেলে মারাত্মক বিপদ, বাঁচার উপায় আছে? ইফতারি প্রদর্শনের সামগ্রী নয়! বাল্টিমোর সেতু দুর্ঘটনা ভয়াবহ: বাইডেন খেলার ধরন জঘন্য, বিচ্ছিরি : পাপন মার্কিন মদদেই কি যুদ্ধবিরতি আটকে রাখছে ইসরাইল দেশে ১৭ কোটি মানুষের ২২ কোটি মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট নাসির-তামিমার মামলায় সাবেক সেনা কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণ একাত্তরে আপনি কোথায় ছিলেন, ফখরুলকে কাদের এই সরকার ১৫ বছরে গণতন্ত্র নিয়ে কোনো কাজ করেনি: ফখরুল

সুখ শান্তিতে ভরে উঠুক বাংলাদেশ

| ২৭ পৌষ ১৪২৯ | Tuesday, January 10, 2023

---মীর আব্দুল আলীম : মানুষই স্বপ্ন দেখে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে সব মানুষই স্বপ্নবাজ। স্বপ্ন নিয়েই মানুষ বেঁচে থাকে। আমিও স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি; সুখস্বপ্ন দেখি। স্বপ্ন দেখি প্রতিদিন দেশে ১৮ কোটি ভালো কাজ হবে, তারপর ৩৬ কোটি, ৭২ কোটি। দিন যাবে আরও অনেক ভালো কাজ হবে দেশে। দেশের মানুষগুলো ভালো কাজে দিনে দিনে জড়িয়ে যাবে, সেই সুখস্বপ্নই দেখি প্রতিদিন। আমরা যদি প্রতিদিন একটি করে ভালো কাজ করি তবে দেশে ১৮ কোটি ভালো কাজ হবে। ২টি ভালো কাজ করলে হবে ৩৬ কোটি ভালো কাজ, ৪টি করলে দৈনিক হবে ৭২ কোটি ভালো কাজ। দেশ তো তখন সোনার দেশ হবে। ভালো কাজের মাঝে খারাপ কাজগুলো পালিয়ে যাবে। স্বপ্নবাজ মানুষ তাই, এমন সুখস্বপ্নতোই দেখি প্রতিদিন।
স্বপ্ন দেখি মাদকমুক্ত বাংলাদেশের; স্বপ্ন দেখি সন্ত্রাস-চাঁদাবাজমুক্ত, নকল মুক্ত, ভেজালমুক্ত, ধরর্ষণমুক্ত, দূষণমুক্ত বাংলাদেশের। সবর্দাই ভ্রাতৃত্ব, পিতৃত্ব, মাতৃত্ব, বন্ধুত্ব অটুট থাকার স্বপ্ন দেখি। রাতে স্বপ্ন দেখি, দিনেও দেখি। আমি জানি যে স্বপ্ন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখি তা প্রকৃত স্বপ্ন নয়; যে স্বপ্ন মানুষকে ঘুমুতে দেয় না সেটাই হলো আসল স্বপ্ন। রাতে ঘুমিয়েই স্বপ্ন দেখি দেশ হানা-হানি, খুন-খুনিমুক্ত হয়েছে। সকালে পত্রিকা পড়লেই দেখি স্বপ্নটা উল্টে গেছে। রাস্তায় লাশ, ঘরে লাশ, শিশু ধর্ষণ, অপমৃত্যু, নির্যাতন এসবেই আটা থাকে পত্রিকা।  একদিন ঘুম থেকে উঠে যদি দেখতাম, সত্যিই দেশটা শান্তির দেশে পরিণত হয়েছে। যদি সকালের পত্রিকার মূল শিরোনামটা দেখতাম এমন ‘শান্তির পথে ফিরে এসেছে বাংলাদেশ!’
যুদ্ধ করিনি। মুক্তিযোদ্ধা নই; রাজাকারও ছিলাম না। যুদ্ধ করার বয়সতো দেড় বছর নয়। ছোট ছিলাম। বাবা যুদ্ধ করেছেন। তিনি স্বাধীনতার মর্ম বোঝেন। যদি দেশটা শান্তিতে ভরে উঠত। সকালগুলো আলোকিত হতো, দিন, সপ্তাহ, মাস, বছরটা ভালোয় ভালো কাটত সবার। দেশ থেকে ঘুষ, দুর্নীতি যদি দৌড়ে পালাত, ধনী-গরিবের ভেদাভেদ না থাকতো, কেউ আর খাবারে ভেজালা না দিত এবং চিকিৎসকরা বাণিজ্যিক না হতো, সাংবাদিকরা দলবাজে ঊর্ধ্বে থাকাত আর ভূমিদস্যুরা মানবিকগুণের হতো, জুলুমবাজরা জুলুম ছেড়ে শান্তির পথে ফিরে আসত- তবে স্বাধীনতার স্বাদ পেতাম আমরা। ভাবি এমন স্বাধীন দেশ কি হবে এদেশ কখনও? কথা হলো, কখনও স্বপ্ন পূরণ হয়, আর কখনও হয় না। এই তো হয়। আমাদের স্বপ্নগুলো একদিন বাস্তবে রূপ নেবেই। দেশ একদিন সোনার দেশ হবেই। এমন স্বপ্নই দেখি প্রতিনিয়ত। আর এমন স্বপ্ন দেখতে দোষ কি তাতে?
চিনের সবচেয়ে বৃদ্ধ মানুষটি ১৪৬ বছর বয়সে মারা গেছেন।  সেদিন পত্রিকা পড়ে আমার সেজ মামা (এখলাস গ্রুপের এমডি আলহাজ মাজহারুল হক ভূঁইয়া) আমাকে বলছিলেন- ওই বৃদ্ধ প্রায়ই নাকি বলতেন ‘আগের দিনও নেই, আগের মানুষগুলোও নেই।’ কঠিন কথা। মামার মুখে এ কথা শোনার পরই ভাবছিলাম এ নিয়ে জাতীয় দৈনিকে একটি কলাম লিখব। সমসাময়িক বিষয়ে লিখতে ভালোবাসি। যেদিনই দেশে কোনো বিশেষ ঘটনা ঘটে, পরদিনই সাধারণত কোনো না কোনো জাতীয় পত্রিকায় আমার কলাম ছাপা হয়। এ জন্য দ্রুত লেখা তৈরি করতে হয় আমাকে। এ লেখাটা লিখতে গিয়ে ভীষণ ভাবনায় পড়ে যাই আমি। ‘আগের দিনও নেই, আগের মানুষগুলোও নেই।’ কয়েকটি শব্দ মাত্র, কিন্তু এর মমার্থ অনেক। কৈ গেল আগের সেই দিন? মানুষগুলো বদলে গেছে বলেই তো দিনও বেদলে গেছে।
এ লেখায় আমার জীবনের দুটি গল্প শোনাতে চাই আপনাদের। ছোটবেলার নষ্টালজিয়া থেকেই সে গল্প বলছি। গল্প তো গল্পই! এ গল্প, গল্প নয় বাস্তব ঘটনা। বাস্তবতার সঙ্গেও যে গল্পের মিল থাকে তা ছোট বেলায় নিজের চোখে দেখেছি। বৃহত্তর ঢাকা জেলার তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ মহকুমার রূপগঞ্জের রূপসী গ্রাম। আমার গ্রাম। প্রিয় স্থান। যেখানে শেষ বেলা ঘুমনোর স্বপ্ন দেখি। ক্লাস থ্রি পর্যন্ত আমার ছোটবেলা ওই গ্রামেই কেটেছে। ছোট বেলায় আমার মায়ে কাছে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার গল্প শুনেছি। তিনি গল্প শুনিয়েই আমাকে বড় করেছেন। মায়ের গল্পগুলো ছিল বাস্তবতার সঙ্গে মিলানো। বলছিলাম হেমিলনের বাঁশিওয়াল গল্পের কথা। জার্মানির হ্যানোভারের ৩৩ মাইল দক্ষিণে হ্যামিলন শহরে হ্যামিলনের বাঁশির সুরে যেমন প্রথমে ইঁদুর ও পরে শিশুদের ঢল নেমেছিল ঠিক তেমনি বিরল ঘটনা ঘটতে দেখেছি আমার জন্মস্থান, রূপসীর অজপাড়া গাঁয়ে। এখনকার স্বনামধন্য পূর্বাচল খ্যাত এলাকাটি তখন নিভৃত গ্রামই ছিল বলা চলে। এখন শিল্প সমৃদ্ধ শহর। যা কিনা হতে যাচ্ছে এশিয়ার সর্ব বৃহৎ স্যাটেলাইট শহর। তখনকার একজন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কথা আমার বেশ মনে পরে। নাম তাঁর সোনামিয়া। যার নামের পরে কবে যে চেয়ারম্যান শব্দটি যোগ হয়েছে এখনও তিনি সেই নামেই সমধিক পরিচিত। তিনি বেঁচে নেই। চেয়ারম্যান চাচা যখন গাঁয়ের ভেতর দিয়ে হেঁটে যেতেন তখন, যুব, বৃদ্ধ, শিশুর দল তার সঙ্গে ছুটতো। হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো অত ইঁদুর আর শিশুর দল তার সঙ্গে না থাকলেও গোটা ৫০ লোক তো তখন সব সময়ই তার পিছু পিছু ছুটতে দেখতাম। তিনি এ তল্লাটে অত্যন্ত জনপ্রিয় ব্যক্তি ছিলেন। তার কথায় তখন সবাই উঠত-বসত। বিচার সালিশ থেকে সব কিছুই সোনামিয়া চাচা অতি সহজে করে দিতেন। তার কোনো সিদ্ধান্তে কারও অমত করতে দেখিনি কখনও। সারা থানাই ছিল তার প্রভাব পতিপত্তি। তার প্রভাব চলতো গরিব অসহায় মানুষের পক্ষে। এখন কি দেখি? নিজেদের নিয়েই ভাবেন অনেকে।
সোনা মিয়া চেয়ারম্যানরা দেশে আছেন কি? থাকলে ক’জন? আজকাল কেউ কাউকে মানতে চায় না। যেন সবাই নেতা। গ্রাম একটা, আর নেতা ১৪ জন। আমার জন্মস্থান রূপসীতেও এখন তাই ঘটছে। দিন দিন গ্রামের মানুষগুলো যেন জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। আর রাজনীতিতে বিশুদ্ধতার বড্ড অভাব দেখা দিচ্ছে। তাই সবার সঙ্গে সবার বনিবনা কম হচ্ছে। আগের মানুষগুলো কই? আগের সেই দিনগুলো কই? নেই। হারিয়ে গেছে। পৃথীবি বদলে গেছে, যা দেখি তা তো সবই নতুন লাগে। আগে অনেক সুন্দর দিন কাটাইতাম। আগে বাঙালি ছিলাম ভালোই তো ছিলাম। সাহেব হয়ে, শহুড়ে হয়ে আর্টিফিসিয়াল হয়ে যাচ্ছি আমরা। আমার দাদা সুবেদ আলী মীর, নানা এখলাছ উদ্দিন ভূঁইয়ার মতো ভালো মানুষ এখন আর দেখি না কেন? কাদা মাটিতে গড়া মানুষ। আমরা এমন হতে পারছি না কেন? ছলচাতুরি, বাটপারি, মিথ্যাচার তাদের কাছেই কখনও ভিড়ত না। গ্রামের বিচার আচার তারাই করতেন। চুলচেরা বিচার। এখন আইন আদালতে ভরে গেছে দেশে। জজ, ব্যারিস্টারের অভাব নেই। সুবিচারের অভাব? এমন দিনের প্রত্যাশায়ই কি ছিলাম আমরা?
স্বাধীতার আগে এবং পরে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের গল্প আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবার কাছে অনেক শুনেছি। আপামর দেশের মানুষ নাকি তখন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশের অপেক্ষায় থাকতেন। তার  কোনো আদেশ পেলেই তাই সাদরে গ্রহণ করত আমজনতা। এখন এই বাংলাদেশেই কত শত নেতা-নেত্রী দেখছি। সবাই ক্ষমতা ধর। কেউ কাউকে ছাড় দিয়ে কথা বলে না; মানতে চায় না; বিশ্বাস করেন না। রাজনীতিতে এখন বড় ভেজাল হয়ে গেছে। শুদ্ধতা, পরিপক্বতা খুবই কম। আগের সেই ত্যাগী নেতাও নেই। সে সময় গ্রামের চেয়ারম্যান, মেম্বারদের অনেক ইজ্জত ছিল। এখন নেই তা বলব না। কতটা আছে জনগণ আপনারাই তা ভালো বলতে পারবেন। এখন চেয়ারম্যান-মেম্বারদের মানুষ মানতে চায় না। নানা বিভেদ ও স্বার্থের কারণে রাজনৈতিক দলের নেতা-নেতৃও কেউ মানতে চায় না। সমীহ করে কতটুকু তা তো দেখছিই প্রতিদিন। করলেও ভয়ে করে বেশি। সমীহ করে মামলার ভয়ে, হামলার ভয়ে, জান খোয়ানের ভয়ে। তবে এভাবে সবাইকে এক কাতারে ফেলা বোধ হয় আমার সমীচীন হচ্ছে না। ভালো মানুষ, ভালো চেয়ারম্যান, মেম্বার, কমিশনার, নেতা-নেত্রী, মন্ত্রী-এমপি নেই তা বলা বোধ হয় ঠিক না। তবে তারা সংখ্যায় খুবই নগণ্য। যার কারণে কতৃত্ব, মর্যাদা হারাচ্ছে রাজৈতিদক দলের নেতা এবং জনপ্রতিনিধিরা। এ অবস্থায় দেশের শৃঙ্খলা, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কোনোটাই সঠিকভাবে হবে না বলেই মনে করছি। এ বিষয়টি আমাদের দেশপ্রেমিক জনগণ, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, সাংবাদিক, রাজনৈতিক এবং বিজ্ঞজন সবাই ভাবনায় এনে নেতৃত্ব এবং জনপ্রতিনিধিদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় আন্তরিক হবেন এটাই আমরা কায়মনে চাই।
আমার গ্রামের ছোট বেলার পল্লী চিকিৎসক। নাম তার ‘টুকুন ডাক্তার’। তিনিও এখন আর বেঁচে নেই। বছর ৪০ আগে মারা গেছেন। নিভৃত পল্লীতে বসেই চিকিৎসা সেবা দিতেন গ্রাম্য চিকিৎসক টুকুন ডাক্তার। তিনি সে সময়কার আমার গ্রামের একমাত্র ডাক্তার। চিকিৎসা সেবার ভরসা। অসম্ভব মেধাবী এই চিকিৎসকের চিকিৎসাপদ্ধতি ছিল একটু ভিন্ন ধরনের। একেবারে সাদাসিধে জীবনযাপন ছিল তার। শোয়ার ঘরটিও টিনের বাংলো ঘরের মতো ছিল। সামান্য সময় পেলেই বসে যেতেন পড়ার টেবিলে। বই-সেই চিকিৎসা সাস্ত্রীয়। ডাক্তারির ওপর সংসার চলত তার। গোটা গ্রামের মানুষের চিকিৎসা করলেও তার অভাবের সংসারই ছিল। টুকুন ডাক্তার তার আসল নাম নয়। তবে এ নামেই তিনি পরিচিত ছিলন। এ নামের ভিড়ে আসল নামটি যেন হারিয়ে গেছে কখন। যখন লিখছি, তখন আমার পিতার কাছে ছুটে যাই টুকুন ডাক্তারের আসল নাম জানতে। তিনিও বলতে পারলেন না। সরলভাবে বললেন- ‘নাম তো টুকুন ডাক্তারই।’ পরে তার ছোট ছেলের কাছ থেকে জানা গেল তার প্রকৃত নাম আবদুল আজিজ। চিকিৎসা করে সকলের কাছ থেকেই টাকা পয়সা নিতেন না তিনি। অভাবি মানুষদের বলতেন- ‘তুমি টাকা দিবা কইথাইক্কা।’ তার সংসারের অভাবটাও বুঝতে দিতেন না রোগীদের।
ঢাকার পাশের রূপসী গ্রামের এই টুকুন ডাক্তারে উপরেই আমাদের গোটা গ্রামের চিকিৎসা সেবা নির্ভর ছিল। আমার ভাগ্নে এ হাই মিলন। বর্তমানে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। আমার বছর খানেকের ছোট হবেন তিনি। সেই ছোট বেলায় কাঁচা বাঁশ দিয়ে ভোঁ ভোঁ করে গাড়ি চালাতে গিয়ে নিজের অজান্তেই আমার থুতনিতেই বাঁশ লাগিয়ে দিলেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে কেটে ঝুলে গেল মাংস। সবাই ধরা ধরি করে ৬ বছর বয়সী আমাকে নিয়ে গেলেন টুকুন ডাক্তারের কাছে। একটু ডেটল, দুটি সেলাই আর কয়েকটি ওষুধ দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিলেন। বললেন- ‘বাড়িত যাইয়া সাগু খাওগা, দুই চারদিন পরে সাইরা যাইবো।’ তাই হয়েছে। সেই আমারই বড় ছেলে সড়ক দুর্ঘটনায় সামান্য ব্যথা পেয়ে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের কেবিনে ২২ দিন, এবং পরে তিনি যে মেডিকেল কলেজের ছাত্র সে মেডিকেল কলেজে ২ মাস ভর্তি ছিলেন। সামান্য পায়ের আঘাতেই তার ৬ মাস লেগে গেছে সুস্থ হতে।
আসলে আমরা নিজেরাই যেন কেন দিন দিন জটিল হয়ে যাচ্ছি। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নয়ন হয়েছে। অবনতি হয়েছে আমাদের। আমাদের চিকিৎসকরা অনেকে দিনকে দিন জটিল হচ্ছেন, বাণিজ্যিক হচ্ছেন (তবে সবাই না)। ছোট বেলায় জ্বর হলে মা জোর করে সাগু খাইয়ে দিতেন। সাগু খাওয়ার ভয়েই দৌড়ে পালাত জ্বর। তা না হলে বড় জোড় ডাকা হতো টুকুন ডাক্তারকে। তিনি যে দোকানে বসে চিকিৎসা দিতেন তার আশপাশের পথঘাটগুলো মান্ধাতা আমলের ছিল। সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটু কাদা। তখন ছিল না ওই গ্রামে বিদ্যুতের ব্যবস্থাও। ভাঙ্গাচোরা রাস্তায় রাত বিরাতে অন্ধকারেই ছুটতেন টুকুন ডাক্তার। তিনি মিক্চার কিংবা দু/একটা বড়ি খাইয়ে দিলেই জ্বর-জারি হাওয়ায় মিলাত। আর হাঁচি কাশি তো তিনি তুড়ি দিয়েই সারিয়ে দিতেন। এখন আছেন কি সেই ভদ্র, সজ্জন, বিনয়ী, ত্যাগী ও মানব দরদী কোন টুকুন ডাক্তার? এখনকার ডাক্তারগন সেবা দেন না তা বলছি না। বললে যে আমার ঘারেই পড়বে বেশি। কারণ আমার পরিবারেই ডজন খানেক ডাক্তার আছেন। ডাক্তারগণ এখন বড্ড বেশি প্রফেশনাল, এটা আমাকে বলতেই হবে। হাসপাতালগুলো তো বটেই!
আমি নিজেও আল-রাফি হাসপাতাল লিমিটেডের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছি। নারায়ণগঞ্জ জেলার হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্ট আমি। উপদেষ্টা হিসেবে স্থানীয় তিন এমপি গাজী গোলাম দস্তগীর (বীরপ্রতীক), নজরুল ইসলাম বাবু, এবং লিয়াকত হোসেনও রয়েছেন। আমরা হাসপাতাল মালিকদের নিয়ে যখন আলোচনায় বসি তখন একটি কথাই আমি আমার বক্তব্যে বলি, হাসাপাতালে ব্যবসা বলবেন না। এটা চিকিৎসা সেবা। ২৭ জানুয়ারি ২০১৮ আল-বারাকা হাসপাতালে সমিতির সাধারণ সভায় অতিথি হিসেবে ছিলাম। সবাইকে একটি গল্প শুনিয়েছে। আমার গল্প তো সব বাস্তব ঘটনা নিয়ে। বাস্তব ঘটনাকে গল্প বলি, এ কারণে যে আমাদের চাওয়া পাওয়াগুলো বাস্তবে রূপ পায় কম। গল্পের মতো মিলিয়ে যায় সব। নাটক সিনেমা শেষ হলে যা হয় তাই। মনে রাখে না কেউ। বাস্তবে রূপ পায় না। দিন আগের কথা। রাতে একজন মোবাইলে ফোন করে বলছেন- ‘স্যার আপনার হাসপাতালের আমার নাতি হইছে। বার বার কইছি সিজার করতে। করে নাই। নরমাল ডেলিভারি করণে আমার মাইয়ার অনেক ক্ষতি হইয়া গেছে।’ কি ক্ষতি জানতে চাইলাম আমি। বললেন, সেলাইয়ে সমস্যা হয়েছে। বললাম অপরাধী তো আমি নিজেই। হাসপাতালে সোজাসুজি বলে দিয়েছি অপারেশন তো দূরের কথা অহেতুক একটি ইনজেকশনও কারও গায়ে পুশ করা যাবে না। আপনারা অপরেশন চাইলেও আমরা প্রথম নরমাল প্রসবের চেষ্টা করি। হয়ত তারা তাই করেছেন। বললাম, একটি অপারেশন এত সহজ কথা নয়। তাতে সারা জীবনের প্রতিক্রিয়া থাকে। আরও বললাম অপারেশন করে দিলেই তো কয়েক হাজার টাকা পেতাম আমরা। জানতে চাইলাম হাসপাতালে কত টাকা দিয়েছেন। ৫শ’ টাকা। বললাম টাকাও বেঁচে গেছে, আপনার মেয়েও একটা অপারেশন থেকে রক্ষা পেয়েছে। বললাম আগামী কাল ৪টায় চলে আসেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজের গাইনির বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে বলে রাখব আপনার মেয়ের সমস্যাটা যেন ভালোভাবে দেখেন। এও বললাম আমাদের অপরাধের জন্য যদি প্লাস্টি সার্জারির প্রয়োজন হয় তাও বিনে টাকায় করে দেব। পরে চিকিৎসা শেষে ওই ব্যক্তি এবং কার মেয়ে আমাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। বলেছি এটা আমাদের কর্তব্য। আমরা অহেতুক অপারেশনে বিশ্বাসী নই। মানুষ তো আমরা? কয়েক হাজার টাকার জন্য অহেতুক পেট কেটে কাউকে পঙ্গু করতে চাই না। চিকিৎসা যেন সেবার জায়গায়ই থাকে, সে কথাই সেদিনের সভায় হাসপাতালের মালিক ডাক্তার সবাইকে বললাম।
সারাদেশে সরকারি, বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযোগের যেন কোনো শেষ নেই। অনেক ক্লিনিকে তো রীতিমতো অচিকিৎসকরাই রোগীদের চিকিৎসা করে যাচ্ছেন। অথচ সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ, স্বাস্থ্য অধিদফতরের বড় বড় কর্মকর্তা যেন ‘নাকে তেল দিয়ে’ ঘুমায়। দেশের ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর অবস্থা তো আরও ভয়াবহ। রোগ পরীক্ষার নামে এদের বেশির ভাগই মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে, রোগীদের প্রকারন্তে হত্যা করছে। এ রকম হূদয়বিদারক ঘটনা অহরহ ঘটছে। কারণ বেশিরভাগ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রশিক্ষিত লোকজন বা টেকনিশিয়ান নেই বললেই চলে। পরীক্ষায় যেসব উপাদান  ব্যবহার করা প্রয়োজন, তা করা হয় না। আবার অনেকে খরচ কমাতে মেয়াদোত্তীর্ণ উপাদান ব্যবহার করে। এসব সেন্টারে আগে থেকে প্যাথলজির একজন অধ্যাপকের সই করা রেজাল্ট শিট থাকে; সেগুলোতে যা খুশি লিখে রোগীর স্বজনদের হাতে ধরিয়ে দেয়া হয়। আমরা জানি না, আর কত নিচে নামব আমরা? নীতি-নৈতিকতাহীন ব্যবসার কাছে মানুষ আর কতকাল অসহায় হয়ে থাকবে? আর কত নিষ্ঠুরতা আমাদের দেখতে হবে? রাষ্ট্রের কাছে আমরা এর প্রতিকার চাই। মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিয়ে যেন ব্যবসার নামে লাগামহীন কর্মকাণ্ড না চলে, তার নিশ্চয়তা চাই।
আমরা বদলাতে চাই, বদলে দিতে চাই। সুখ চাই; শান্তি চাই। বউলের মতো সুরে সুরে বলতে চাই না ‘শান্তির মায় মইরা গেছে অশান্তির মায় মরে না।’ শান্তির সুখম্বপ্ন দেখি আমরা। শান্তিময় বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি আমরা। নীতি-নৈতিকতা বির্জিত মানুষ হতে চাই না আমরা। নোংরা কুলশিত সমাজ চাই না। ব্যবসার নামে এক শ্রেণির বিবেকহীন মানুষ বিষ খাইয়ে মানুষ মারছে। অপচিকিৎসায় দেশে মানুষ মরছে। একজনের জমি আরেকজন গায়ের জোরে হরণ করছে। সম্পদ লুট হচ্ছে, মানুষ গুম হচ্ছে, খুন হচ্ছে। দিন দিন প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মানুষ। প্রতিনিয়তই আমাদের ভেজাল ও বিষযুক্ত খাবার হজম করতে হচ্ছে, ব্যবসার নামে শিক্ষার অধঃপতন ঘটিয়ে দেশে সার্টিফিকেট বিক্রি হচ্ছে, বার বার প্রশ্নফাঁস হচ্ছে। আরও কত কী! অথচ রাষ্ট্র উদ্বেগহীন, নির্বিকার। এভাবে আর কত কাল চলবে?
এভাবে তো চলে না? চলতে পারে না? আর চলতে দেয়া যায়ও না। সব শেষ হয়ে যাবার আগেই বদলে যেতে হবে আমাদের। মুখোশধারীদের রূপ বদলে দিতে হবে। তবেই বদলে যাবে দেশ। এই স্বপ্নই দেখি আমরা। এ লিখার শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। ভোর হয়েছে। মোয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাচ্ছি। সুন্দর সকালটার মতোই সুন্দর হোক আমার এ দেশ। আমাদের স্বপ্নগুলো বাস্তবে রূপ পাক। এই প্রত্যাশা।

লেখক- মীর আব্দুল আলীম, সাংবাদিক, কলামিস্ট ও সমাজ গবেষক।