পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অসহায়ত্ব প্রকট হয়েছে
|
১৫ বৈশাখ ১৪২৭ |
Tuesday, April 28, 2020
এন রায় রাজা : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মীজানুর রহমান বলেছেন, বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়েছে তা হলো, পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অসহায়ত্ব। পুঁজিবাদী ও সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের দীর্ঘদিনের যে মূল বিতর্ক ছিল, এখন সংকটকালে বোঝা গেছে পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় ভিতরে ভিতরে খয়ে যাওয়া, তা আজ বড় প্রকট হয়েছে আমেরিকা-ইউরোপের মত দেশগুলোতে। তবে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো তাদের তুলনায় সঙ্কট মোকাবিলা কিছুটা হলেও ভালো করছে। রাশিয়া, চীন, ভিয়েতনাম এমনকি ভারতের কেরালাও এ রোগ নিয়ন্ত্রণে ভালো করছে। সেখানে রেজিমেনটেশনে একটা ব্যাপার আছে। সমাজতন্ত্রে সব কিছু গড়ে তোলা হয় সমাজ ব্যবস্থার ভিত্তিতে, আর পুঁজিবাদী ব্যবস্থা ধনীদের জন্য। কোথায় এ্যপোলো হাসপাতাল? এদের এখন কোন ভূমিকা কই, কি করতে পারছে? সোমবার ভোরের কাগজের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
ড. মীজানুর রহমান বলেন, তবে আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ এর যে ফাঁক ফোকড় তা ঠিক করতে হবে। দেশের সব প্রায় মানুষের এখন মোবাইল রয়েছে। সবার মোবাইল নম্বর, কর্ম, আয় সব তথ্য জাতীয় ডাটা বেইজে থাকা দরকার। তাহলে তাদের সহায়তা বা সতর্ক করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, আমাদের যে ৫ কোটি দরিদ্র ছিল, কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে একদিন কাজ না থাকলে খাবার পায় না প্রায় ১০ কোটি মানুষ, খুবই বাজে অবস্থার মধ্যে পড়ে গেছে এরা। এদেরকে উদ্ধার করার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা, সামাজিক নিরাপত্তা নেট জোরদার করতে হবে। আসলে আমরা ডিজিটালাইজড হচ্ছি বলা হচ্ছে, কিন্তু আমাদের জনগণের কোনো তথ্য কারো কাছে নেই। কারা কোন পেশায় কত জন, আয় কত অর্থাৎ জাতীয় ডাটা বেইজ অসম্পূর্ণ তা পূনরায় ঠিক করতে হবে। একটা সম্পূর্ণ ডিজিটাল জাতীয় ডাটা বেইজ তৈরি করতে হবে।
তিনি বলেন, গত এক সামাধিককাল ঘরে থেকে আমরা নতুন নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখিত হচ্ছি। হোম কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন এসব আমরা জানতাম না, আমারা এসব নতুন কিছু শিখছি। তবে পৃথিবীর ধনী দেশ যেভাবে হোম করেনটাইন বা সামাজিক ডিসট্যান্স বজায় রাখতে পারে আমাদের মত ঘন বসতীপূর্ণ দেশে কি তা সম্ভব? যেখানে ঢাকা শহরে একজন শ্রমিক বা রিকসাওয়ালা, সিএনজি বা গাড়ি চালক ৭-৮ জন সদস্য নিয়ে এক রুমে থাকে। তাদের জন্য হোম কোয়ারেন্টাইনই বা কি আর আইসোলেশনি বা কি, তা তো সম্ভব নয়।
ড. মীজানুর বলেন, দীর্ঘদিন তো সব কিছু বন্ধ করে রাখা যাবে না। আমরা করোনা থেকে মুক্তি পেলাম, কিন্তু দুর্ভিক্ষে না খেয়ে মারা গেলাম, তা তো হতে পারে না। সেজন্য আস্তে আস্তে কিছু সেক্টর খুলতে হবে। বিশেষ করে কৃষিতে জোর দিতে হবে। যাতে আমাদের খাদ্য সঙ্কট না হয়। আমাদের গার্মেন্টস সেক্টার স্বল্প পরিসরে খুলেছে। তবে আন্তর্জাতিক অর্ডার বন্ধ হলে এসব কারখানাও বন্ধ হয়ে যাবে। আগামী ২ বছর পর্যন্ত গার্মেন্টস সেক্টর মন্দা যাবে এখানে অনেকের চাকুরী চলে যাবে। আর রেমিটেন্সের বিষয়ে অনেক ধাক্কা খেতে হবে। ইউরোপ আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যের লোকেরা নিজেরাই খেতে পারছে না, তা আমাদের লোক সেখানে কিভাবে আয় করবে। সেখানে আমাদের কর্মীদের চাকুরী থাকবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।
তিনি বলেন, বিশ্ব খাদ্য সংস্থা ও এফএও বলছে বিশ্বে বহু মানুষ খাদ্যাভাবে মারা যাবে। কিন্তু আমাদের সুবিধা হচ্ছে। আমাদের খাদ্য উৎপাদন ভালো হয়েছে। এ সেক্টরের নির্ভরতা বাড়াতে হবে। তাহলে আমরা খাদ্য সামগ্রি বেশী বেশী উৎপাদন করে বাইরের দেশে রপ্তানী করে প্রয়োজনীয় জিনিষ আনতে পারবো। এটা একটা সুযোগ।
স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে। রাতারাতি এটা করা যাবে না। ডাক্তারদের রোগতত্ব ও অন্য বিষয়ে গবেষনায় জোর দিতে হবে। আর দুর্নীতি, লুটপাট, ফাঁকিবাজি এসব বন্ধ করতে হবে। জাতিকে একজোট হয়ে আগামীর জন্য প্রস্তুত হতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।