সকল শিরোনাম
এ পাতার অন্যান্য সংবাদ
ভুলে ভরা এনআইডি ইসরায়েলে মুহুর্মুহু রকেট নিক্ষেপ হিজবুল্লাহর ওষুধের ঊর্ধ্বমুখী মূল্যেও দিশেহারা সাধারণ মানুষ ভোগান্তি বাড়বে ঈদযাত্রায় আওয়ামী লীগে গৃহবিবাদ : দেখার নেই কেউ ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে গণহত্যা চলছেই গণপরিবহনে এই বিশৃঙ্খলা জয় বাংলা বাংলার জয় ভারতকে হারিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ যুবার মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ পরিচালনায় এন্তার অভিযোগ জলবায়ু ন্যায্যতা প্রদানে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সাধুবাদ জানাই কষ্টের বর্ষন বাংলাদেশে.. পণ্যমূল্য বেড়ে আমজনতার নাভিশ্বাস জাতীয় সাহিত্য সম্মাননা পেলেন দেশের ৯ গুণী ব্যক্তি কেন এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়?অর্থনীতিতে এগুচ্ছে দেশ; সভ্যতায় কেন পিছিয়ে?
| ২৫ মাঘ ১৪২৫ | Thursday, February 7, 2019
মীর আব্দুল আলীম :
বাংলাদেশ এখন আর হেনরি কিসিঞ্জারের ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ নই। উন্নয়নে,
অর্থনীতিতে এগুচ্ছে দেশ। আমাদের পত্রিকা গুলোও আজকাল লিখছে- “বাংলাদেশের
অর্থনীতির ঝুড়ি এখন টইটম্বুর”। এটা কিন্তু সত্য। এও সত্য আমরা এখনও সভ্য
নই। সভ্য হতে পারিনি। আমাদের রূপ বদলেছে, মানুষের ভেতরটা এখনও বদলাইনি।
এখনও আমরা আইন মানি না, কথায় কথায় ঘুষ-দুর্নীতি করি, খাদ্যে ভেজাল দেই।
এখনও মোটেও সচেতন হইনি আমরা। সড়কে কথায় কথায় মানুষ মরে। বিষ মিশ্রিত
খাবার খেয়ে মানুষ জটিল কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়। বিষাক্ত খাবার খেয়ে
ষ্ট্রোক, হৃদরোগ আর ক্যান্সারে অকাল মৃত্যর দিকে এগুচ্ছি আমরা। আগে যারা
তিন বেল খাবার পেত না এখন তারা মোটামুটি সচ্ছল। সবারই সঙ্গতি বেড়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে বাংলাদেশ উন্নত
দেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা এগুচ্ছি; উন্নত হচ্ছি, কিন্তু সভ্য হচ্ছি
না। সভ্যতায় আমরা বড্ড পিছিয়ে।
অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য অনেক দেশেই ছুটে গেছি। যেসব দেশকে খুব দারিদ্র
ভাবতাম তারা আমাদের চেয়ে সভ্যতায় অনেক বেশি এগিয়ে। ভুটানে যাইনি এই ভেবে
পাহার আর গরিব দেশে কি দেখব, আর শিখবইবা কি? গত ২৫ জানুয়ারী আল-রাফি
হাসপাতাল লি’এর পরিচালক এবং ডাক্তারদেও নিয়ে এক অনুষ্ঠানে মিয়ানমার যাই।
আমরা প্রায় ৮ লাখ মানুষের দেশ থেকে অনেক কিছু শিখলাম। মানুষ সভ্য হতে
পুলিশ প্রশাসনের দরকার হয় না। ৪৬,৫০০ বর্গকিলোমিটার দেশের মানুষ আইন মেনে
চলে। নিজ চোখে যা দেখলাম তাই লিখছি। ১৯৫০-এর দশক পর্যন্ত ভূটান একটি
বিচ্ছিন্ন দেশ ছিল। ১৯৬০-এর দশকে ভারতের কাছ থেকে অর্থনৈতিক সাহায্য নিয়ে
দেশটি একটি সভ্য রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হতে শুরু করে। তবে এখনও এটি বিশ্বের
সবচেয়ে অনুন্নত দেশগুলির একটি। অনুন্নত একটি দেশ নিয়েই কথা বলছি আমি।
হাসপাতালের ডাক্তার এবং পরিচালকদেও নিয়ে মাত্র পাঁচ দিন ছিলাম। এ অল্প
সময়েই নিজেকে সুস্থ্য অনুভব করছিলাম। খাবারের ভীতি ছিলো না। ভেজাল দিতে
ওরা বোধ হয় শিখেনি। নিন্মমানের হোটেল গুলোও আমাদেও পাঁচ তারকা হোটেলের
মতো পরিচ্ছন্ন। ফল ফলাদি খেলেই বুঝা যায় ভালো কিছু খাচ্ছি। দরিদ্র দেশটির
মানুষ গুলো পরিচ্ছন্ন জীবন যাপন করে। পোশাকাশাক দামী না হলেও আধুনীকতার
ছাপ। সব চেয়ে বড় কথা ওরা আইন ভাঙ্গেনা কখনো। ঐ দেশে চুরি ডাকাতি নেই। যদি
থাকতো মাইলকে মাইল পাহাড়ি নির্জন পথে আমরাই ডাকাতের কবলে পড়তাম। রাস্তায়
৫ দিনে পুলিশ দেখেছি এক জন মাত্র। রাস্তার আইন ওরা শতভাগ মানে। তাই
দুর্গম পথেও দুর্ঘটনা নেই বললেই চলে। আমাদের বহনকারী ট্যুরিষ্ট বাসটি
নিদৃষ্ট জায়গাতেই থামছিলো। আমরা কোন দর্শণীয় জায়গা পেলে নামতে চাইলেও
বলছিলো এখানে থামার নিয়ম নেই। ত্রীসীমানায় কেউ নেই তবুও নিজ থেকেই
ড্রাইভার নিয়ম মেনে চলছে। কখনো মোবাইল ফোন ধরার প্রয়োজন হলে গাড়ি থামিয়ে
কথা শেষ কওে তবেই গাড়ি চালাচ্ছিলেন তিনি। পথচারীরর চেয়েও ড্রাইভারগণ অনেক
বেশি সচেতন। পথচারী পথ পাড় হবে বুঝতে পেরে বহু আগে থেকেই গাড়ি থামিয়ে বসে
থাকে ড্রাইভার। এমন নিয়ম কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, জাপানে দেখেছি। বোধ করি তার
চেয়েও গরিব দেশটিতে ড্রাইভাররা অনেক বেশি সচেতন মনে হয়েছে আমার। এখানে
সিসি ক্যামেরা পুলিশ নজরদারী নেই, আইন না মানলেও দেখার কেউ নেই, তবুও ওরা
আইন মানছে। ওরা সভ্য তাই সড়কে নিরাপত্তা বেশি। পাঁচ দিন সড়কে নির্ভয়ে
চলেছি। ভীতি ছিলো না। আমাদের ফুটপথ দিয়ে চলতেও ভয় পাই, কখন গাড়ি গায়ে উঠে
যায়।
যখন দেশের বাইরে যাই, ফিরার রাতে দুঃস্বপ্নরা আমাকে পেয়ে বসে। ২৫ মে
২০১৮; ঘড়িতে তখন ৩টা বাজে; রাত ৩টা। আমার মনে হচ্ছে, কেউ আমাকে তাড়া
করছে; ভীষণ ভয় দেখাচ্ছে। আমি প্রাণপণ চেষ্টা করছি চিৎকার করতে; দৌড়ে
পালাতে। কিন্তু কোনো এক অজানা শক্তি আমাকে তিল পরিমাণ নড়তে দিচ্ছে না।
কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম নিয়ে চিৎকার করে উঠে বসলাম। যে দেশেই যাই, প্রতি
বারই দেশে ফেরার রাতে এ জাতীয় একই চিত্র; একই আতঙ্ক! এ আতঙ্কর অবশ্য কারণ
আছে। দেশের বাইরে সভ্য মানুষ, সভ্য রাষ্ট্র দেখে সারাক্ষণ আমি ভাবনায় পরে
যাই। ভাবি ওরা এমন কেন? আর আমরাই বা কেন এমন?
সর্বশেষ লায়ন্স ক্লাবের বাংলাদেশ দলের সাথে মিয়ানমারের ইয়াংগুনে যাই গত
২২ মার্চ। অনেক ধনী রাষ্ট্রে যাবার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। কিন্তু
মিয়ানমারের মতো দরিদ্র একটি রাষ্ট্রে এসে ওদের সভ্যতা আর আমাদের সভ্যতার
তফাৎ দেখে বেশ লজ্জাবোধ হলো আমার। হতবাকতো হয়েছিই। মিয়ানমার সম্পর্কে
আমাদের ধারণা খুব একটা ভালো নয়। ধর্মের বিষয়ে তো নয়ই। বার্মা বা মিয়ানমার
মানেই দরিদ্র একটি রাষ্ট্র। মুসলমানদের নির্যাতনের ব্যাপারেও তাদের আছে
অনেক বদনাম। সেদেশের সেনারা অনেক নিষ্ঠুরতা চালিয়ে বহু মুসলমানদেও ওরা
হত্যা করেছে। যা সারা বিশে^ ঘৃন্নিত। এ রাষ্ট্রের ব্যাপারের আমাদেও বাজে
অভিজ্ঞতা আছে। আর যাই হউক, ওরা আইনের প্রতি অনেক বেশি শ্রদ্ধাশীল।
স্বাস্থ্য সচেতন এবং দেশপ্রেমিক মনে হয়েছে আমার। এখানে এসে বুঝলাম আইন
মানতে, আর সভ্য হতে অর্থের প্রয়োজন পরে না। ভালো কিছুর গুণকীর্তন করতেই
হয়। মিয়ানমারের ভালো কিছু থাকলে সেটা নিয়ে আলোচনা করতেই পারি। মন্দটা না
হয় ওদের কাছেই থাক। ওদের ভালো কিছু যা আছে, যা থেকে আমরা শিক্ষা নিতে
পারি তা নিয়েই এ লেখায় আলোকপাত করবো আজ।
মিয়ানমারের রাস্তায় ডিভাইডার নেই বললেই চলে। সাদা দাগ দিয়ে চলার পথ
নিদৃষ্ট করা। রাস্তায় ট্রাফিকও নেই খুব একটা। অবাক করা কথা ৫ দিনের
যাত্রায় একটি বারও কাউকে নিজ দাগ অতিক্রম করতে দেখলাম না। আমরা যেখানে
পারলে ইটপাথরের ডিভাইডার উল্টেপাল্টে চলতে অভ্যস্ত সেখানে ওরা দাগও
অতিক্রম করে না। একদিকে এক কিলেমিটার ট্রাফিক জ্যাম চলে গেছে। অন্যদিকে
ধেয়ে চলছে গাড়ি। ডিভাইডার নেই তবুও কেউ কারও জায়গায় যাচ্ছে না। আমাদের
দেশে ডিভাইডার দিয়ে যেখানে রক্ষা নেই সেখানে সাদা দাগই তাদের জন্য
যথেষ্ট। ওভারটেকিং কিংবা হর্ন বাজানো দরকার না পরলে কেউ করে না সাধারণত।
দিনে এমন; দেখি রাতে ওরা কি করে? ইয়াংগুনের ৫ তাঁরকা হোটেলের রুম থেকে
গভীর রাতে রাস্তার দৃশ্য দেখতে জানালার পাশে গিয়ে বসলাম। গভীর রাতেও
কাউকে দাগ অতিক্রম করতে দেখিনি। লেইন পরিবর্তন করতে গেলেও রাতেও ১/২
কিলোমিটার ঘুরে তবে অন্য লেইনে যায় গাড়িগুলো। সৌদি আরব, চীন, সিংগাপুর,
মালয়েশিয়া, কোরিয়া, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশেই এ অবস্থা লক্ষ্য করেছি।
ভাবি আমরা কেন ওদের কাছ থেকে শিক্ষা নিচ্ছি না? আমাদের রাষ্ট্র যারা
পরিচালন করেন তারাতো এসব দেশে আসেন। রাষ্ট্রের খরচায় ওনারা বিদেশে আসেন।
প্রশ্ন হলো তারা কি এসব দেখেন না? শিখেনই না বা কেন?
মন্দ ভাগ্য আমাদের। আমাদেও লোকজন শেখানও না; শিখানও না। শিখলে আর শিখালে
আমাদের রাষ্ট্রের পরিবহণ ব্যবস্থাও এমন হতো না কখনই। আইন কেরলেই হয় না।
আইন প্রয়োগ করে শিখাতে হয়। ইয়াংগুনের অধিবাসীদের সাথে কথা বলে যতদূর
জেনেছি, পরিবহণ ব্যবস্থা এমন করতে রাষ্ট্র যন্ত্র খুব নিষ্ঠুর ছিল। যারা
আইন মানতো না তাদের কঠোর শাস্তি দিয়ে সভ্য করা হয়েছে। সভ্য হতে বাধ্য করে
তবেই সভ্য করা হয়েছে। আর একবার কেউ সভ্য হয়ে গেলে, অসভ্য হতে বিবেকে বাধ
সাধে। বলতে গেলে ওদেরকে সভ্য হওয়ানো হয়েছে। আমাদের যোগাযোগমন্ত্রী
ওবায়দুল কাদেরকে আমার কাছে অন্যসব মন্ত্রীদের চেয়ে একটু ভিন্ন মনে হয়।
দেখি তিনি মাঝে মাঝে রাস্তায় নামেন। হুঙ্কার দেন। যদিও তাঁর হুঙ্কার কাজে
আসছে না। আসলে আমাদেও সড়ক এখনও এতো অনিরাপদ থাকতো না। আমি প্রধানমন্ত্রীর
দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই- ‘আমরা সভ্য নই, আপনি আমাদের সভ্য হতে বাধ্য
করুন। কঠোর হোন। আমি বিশ্বাস করি আপনি চাইলে তা পারবেন। প্রধানমন্ত্রীতো
ছোট পদ নয় যে, ইচ্ছা পুরণ হবে না। ইচ্ছা করতে হবে; নিষ্ঠুর হতে হবে; তবেই
আমাদের সভ্য বানাতে পারবেন আপনি।
অনেক বদঅভ্যাস আছে আমার। কোন দেশে গেলে রাতে ঘুরে ঘুরে শহর গ্রাম দেখি।
প্রচন্ড শীত মাইনাস ৪ ডিগ্রী তাপমাত্রা। শীতে যবুথবু, তবুও দিন শেষে,
রাতেও ঘরেছি। নিরাপদ মনে করেছি তাই রাত ঘুরতে ভয় হয়নি। নির্জন পাহাড়ি পথে
কেউ থামিয়ে আমাদের অর্থকড়ি ছিনতাই করতে আসেনি। যেবার ইয়াংগুন গিয়েছি,
রাতের ইয়াংগুন দেখবো বলে রাত ১২টায় আমার বড়ভাই (ফুফাতো) সোনারগাঁও
ইউনিভার্সিটির অন্যতম পরিচালক লায়ন শামিম মাহাবুবকে নিয়ে বেরিয়ে পরি।
বিদেশ বাড়িতে নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে তিনি শঙ্কিত ছিলেন। আমার ভেতরে ভয়
নেই। কারণ যদি ভালো করে নাই দেখলাম, পাঠকের জন্য কি লিখবো। লিখার তাড়নায়
আমি অনেক বেশি সহসী হলাম। ইয়াংগুনে রাতেও টেক্সি পর্যাপ্ত। দিনে তো পানি
পান্তার মতো। রাস্তায় কোথাও গাড়ি পার্কিং করে না কেউ; করলেই জরিমানা।
আমরা ইয়াংগুনে বিমানবন্দরে আসার সময় কিছুটা সময় অপেক্ষা করাতেই গাইডকে
জরিমানা গুণতে হয়েছে। যা বলছিলাম রাতেও ট্যাক্সির জন্য খুব একটা অপেক্ষা
করতে হলো না আমাদের। মিনিট দুই মাত্র। রাত বারটা মানেই সেখানে অনেক রাত।
কারণ মিয়ানমারের অধিবাসীরা রাতের খাবার ৭টার মধ্যেই সেরে নেয়। সকালের
নাস্তাও সকাল ৭টায় শেষ হয়। আমাদের তাই করতে হয়েছে প্রতিদিন। না করলে
নাস্তা কিংবা ডিনার সম্ভব ছিল না। টেক্সি নিয়ে রাতে পৈ পৈ করে ঘুরেছি
আমরা। দেখেছি রাতের ইয়াংগুন। সবাই নিশ্চিন্তে চলছে। ছিনতাই কিংবা
প্রতারিত হবার ভয় নেই। দিনে ট্রাফিক চোখে না পরলেও রাতে পুলিশ দেখেছি
পর্যাপ্ত। যতদিন ছিলাম লায়ন্স ক্লাবের প্রগ্রাম শেষে হোটেলে ফিরে ডিনার
এবং কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে রাতে ট্যাক্সি নিয়ে বেরিয়ে পরেছি। অল্প সময়ের
জন্য গিয়েছি সেখানে, তাই রাতের সময়টাও নষ্ট করতে চাইনি আমি। ফাঁকি দিলে
ভালো কিছু লেখা হবে না তাই সময় কাজে লাগানো আরকি।
এদেশে রাতে ঘুরে বেড়ানো দুস্কর হয় বৈকি! কক্্রসবাজার সীবীচে রাতে
ছিনতাইয়ের খবর জানতে পারি। পট্রগ্রামের পতেঙ্গায়তো রাত ১০টার পর ভয়ংকর
রূপ নেয়। রাতে শহর কিংবা গ্রামে একা চল দায়। মাস্তান ছিনতাইকারীদেও ভয়।
কি জানি কি হয়। আমাদেও দেশটা কিন্তু অর্থনীতিতে অনেক এগিয়েছে। দেশে
ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। সভ্যতায় এগুয়নি বরং পিছিয়েছি। লজ্জা লাগে আমরা সৎ
নই ঘুষখোর। বেতন বাড়ে চরিত্র ভালো হয় না। প্রধানমন্ত্রীকে ঘুষের বিরুদ্ধে
হুঙ্কার দিতে হয়। ভেজাল খাদ্য রোধে নির্দেশ দিতে হয়। সড়ক নিরাপদ করতে
দেশের প্রধানমন্ত্রীকে কেন বলতে হবে। আমাদেও কি কোন দ্বায় দ্বায়িত্ব নেই।
মন্ত্রী, আমলা, কর্মকর্তা কর্মচারীরা কি করেন? নাকে তেল দিয়ে ঘুমান? আমরা
কখনই ভাবি না আমরা সভ্য হলেই দেশটা সভ্য হয়।
বিদ্যুতের অভাবনীয় সাফল্য এবং শিল্প, কৃষি, বাণিজ্য, একটি বাড়ি একটি
খামার, শিক্ষা-স্বাস্থ্যের উন্নতিতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার তিন বছর
ধরে রয়েছে ৭ শতাংশের ওপরে। অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেগা
প্রকল্পের মাধ্যমে উন্নয়ন কর্মকান্ড যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে; বিদেশি বিনিয়োগ
অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি অনেক প্রভাবশালী দেশকে
ছাড়িয়ে যাবে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক
৬৫ শতাংশ। বর্তমান ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। ২০২০ সালের মধ্যে প্রবৃদ্ধির হার ৮
শতাংশে পৌঁছানোর লক্ষ্য চলতি অর্থবছরের মধ্যেই বাস্তবায়ন হতে পারে বলেও
আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। বাংলাদেশ
পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদন
(জিডিপি) ও এর প্রবৃদ্ধির হারে দেখা যায়, গত অর্থবছরে জিডিপি তথা
অর্থনীতির আয়তন দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা, আর আগের বছরের
তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। প্রবৃদ্ধির এই হার সপ্তম
পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় প্রক্ষেপিত ৭ দশমিক ৪০ শতাংশের চেয়েও বেশি। এটি
একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন, যা নিয়ে দেশের নীতিনির্ধারকসহ বিভিন্ন মহল
স্বাভাবিকভাবেই বেশ উচ্ছ্বসিত। কিন্তু উচ্ছ্বাসিত নই সভ্যতায়।খাবাওে
ভেজাল বাড়ছে, সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে, দুর্নীতি বাড়ছে। আগে পুলিশকে ২/৫শ’
টাকা দিলে চলতে। পওে হাজার, লাখ ছাড়িয়ে কোটির অংকে ঘুষ লেনদেনে হয়। ভুমি
অফিসে, সাবরেজিষ্ট্রি অফিসে নিয়ম করে, কাজ অনুসাওে প্রকার ভেদে নানা
অংকের ঘুষের লেনদেন চলে। হাসপাতালে দুর্নীতি চলে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে
দুর্নীতি। কোথায় নেই দুর্নীতি? এক প্রধানমন্ত্রী একা কি দুর্নীতি রোধ
করতে পারবেন? দেশটা আমাদেও সবার আসুন আমরা সবাই মিলে দুর্নীতি মুক্ত
বাংলাদেশ গড়ি।
এ কথা সত্য যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে
বাংলাদেশ উন্নত দেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০৪১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের
সামনে আছে আরো ২২টি বছর। এই সময়ে আরো ২২টি সিঁড়ি ভেঙে বাংলাদেশ উন্নত
দেশে উত্তীর্ণ হবে এটাই লক্ষ্য। এই সময়ের মধ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার মাধ্যমে বিশ্বে বাংলাদেশ একটি
মর্যাদাশীল, উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে উত্তীর্ণ হবে বলে অভিমত অর্থনৈতিক
বিশ্লেষকদের। বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক রেমিট্যান্সেও
সুখবর দিয়ে শেষ হয়েছিল ২০১৮ সাল। গত বছরে এক হাজার ৫৫৩ কোটি ৭৮ লাখ (১৫
দশমিক ৫৪ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন তারা। এই অংক ২০১৭ সালের
চেয়ে প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি। এরই ধারাবাহিকতায় নতুন বছরের প্রথম মাস
জানুয়ারিতে রেকর্ড ১৫৯ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন
প্রবাসীরা, যা এক মাসের হিসাবে রেকর্ড। রেমিট্যান্সের এই অংক গত বছরের
জানুয়ারির চেয়ে ১৫ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং আগের মাস ডিসেম্বরের চেয়ে ৩২ দশমিক
২ শতাংশ বেশি।
এদিকে গত ১০ বছরে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পন্নতা অর্জন, স্বাস্থ্য ও
শিক্ষা খাতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন, গড় আয়ু বৃদ্ধি, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস
পাওয়ায় বেড়েছে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ। ইতোমধ্যে বিনিয়োগ বাড়াতে প্রথম কৌশল
হিসেবে বড় আকারের ফার্স্ট ট্র্যাক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে
রয়েছে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ, ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্প,
ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ, পায়রা
সমুদ্রবন্দর নির্মাণ ও সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ। স্বাধীনতার
সময়ে আমাদের অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও একটি ভঙ্গুর অর্থনীতি ছিল। সে অবস্থা
থেকে একধরনের টেকসই ভিত্তি তৈরি করা গেছে বর্তমান অর্থনীতিতে। যার ফলে
আমাদের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি দিক তৈরি হয়েছে। যেমন প্রবৃদ্ধির মাত্রাগুলো
একটি গতি ধরে এগিয়েছে। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরে আমাদের চাওয়ার জায়গাটায়
একটি পরিবর্তন এসেছে। এখন কেবল সভ্য হতে হবে আমাদের।
সর্বশেষ এটাই বলা যায়, আমাদেও সকল ক্ষেত্রে দ্বায়িত্বসীল হতে হবে। যার
যার কাজ তাকেই করতে হবে। দুর্নীতিকে না বলতে হবে। পরিবেশ সচেতন হতে হবে।
খাদ্যে সচেতন হতে হবে। যোগাযোগ, বিশেষ করে ট্রাফিক আইন মানার বিষয়টিতেও
আমাদেও অনেক শিক্ষা নেয়া প্রয়োজন। আইনশৃঙ্খলা, নিরাপত্তা, পরিচ্ছন্নতার
বিষয়টিতেও আমাদের সজাগ হতে হবে। ঐ যে বললাম আমাদেও সকলকে সভ্য হতে হবে।
তবেই সোনার বাংলাদেশ গড়তে সহায়ক হবো আমরা।
@লেখক- মীর আব্দুল আলীম, সাংবাদিক, কলামিষ্ট, গবেষক।