শিশুর অসহ্য পেটব্যথা ও চিকিৎসা

৩ থেকে ৪ মাস বয়সী শিশুর বিভিন্ন ধরনের অসুখের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত একটি রোগের নাম ইনফেন্টাইল কোলিক বা পেটব্যথা। অনেকটা রহস্যময় কারণেই এ বয়সী শিশুরা হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রাখে এবং পা পেটের কাছে ভাঁজ করে। এ বিশেষ সময়ে বলা নেই, কওয়া নেই, যখন-তখন গগনবিদারী চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। মায়েরা ভাবেন, শিশুর নিশ্চয় ক্ষুধা পেয়েছে, নয়তো পেটের পীড়ায় ভুগছে। অনেক মা এমনও ভাবতে থাকেন, নিশ্চয় পেটে কৃমি হয়েছে, নইলে এমন করে কাঁদবে কেন? কোনো কোনো মা এ-ও ভাবতে থাকেন, পায়খানা পরিষ্কার হচ্ছে না বলেই এমন হচ্ছে। ঠা-ার কারণে শিশু কাতরাচ্ছে হয়তো, ন্যাপি বুঝি প্রস্রাবে ভিজে জবুথবু হয়ে গিয়েছিল! বিস্ময়কর ব্যাপার হলোÑ শিশুটি গগনবিদারী  কাঁদতে কাঁদতে ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ে। অনেক সময় দু-তিন ঘণ্টা ধরেও অনবরত কাঁদতে পারে শিশুটি।

অনেকে অবশ্য সন্তানের কান্না বন্ধের জন্য নিষিদ্ধ ওষুধ গ্রাইপওয়াটার দিয়ে থাকেন। কিন্তু গ্রাইপওয়াটারের মৃদু অ্যালকোহল শিশুকে নিদ্রালুভাবের দিকে নিয়ে গেলেও মূল সমস্যাটির কারণ অবশেষে ঢাকা পড়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে শক্ত করে কাপড় বাঁধা, শিশুকে সঠিকমতো খাবার খাওয়ানোর পর বার্পিং না করা, শিশুর প্রস্রাব হঠাৎ আটকে যাওয়া, কানে দুধ চলে যাওয়ায় কানে ব্যথা এবং ঠা-ায় নাক আটকে যাওয়ার কারণে কাঁদতে শুরু করে। এমন অবস্থা ছাড়া ৩ থেকে ৮ মাস বয়সী শিশুর অজানা কারণে কান্না দেখা দিলে দুশ্চিন্তা না করাই ভালো। বরং এ সময় শিশুকে আরাম করে কোলে তুলে নিন। শিশুর জন্য কোল নিরাপদ আশ্রয় করে তুলুন। শিশুকে ডান দিকে কাত করে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করতে পারেন। রাতের বেলায় শিশুকে বিশেষ করে রাত ১০টার পর বুকের দুধ বা খাবার না খাওয়ানোর চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে শিশুবিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন।
চিকিৎসকরাও যখন কোনো রোগের উপসর্গ খুঁজে পান না, তখন রোগটি ৩ মাসের পেটব্যথা বা ইনফেন্টাইল কোলিক বলে চিহ্নিত করে থাকেন। এ ক্ষেত্রে রোগটি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে মা-বাবাকে আশ্বস্ত করাই হলো এ রোগের মূল চিকিৎসা। অনেক ক্ষেত্রে শিশুদের ব্যথার জন্য চিকিৎসকরা ঘুমের ওষুধ ফেনোবারবিটন, ক্লোরাল হাইড্রেট এবং ব্যথার ওষুধ হাইফেসিন ব্রুটাইল ব্রোমাইড, মেটোক্লোরপ্রোমাইড ইত্যাদি ওষুধ সেবনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ইনফেন্টাইল কোলিক ব্যতিক্রম করে ১ মাস বয়সেও দেখা দিতে পারে। 
তবে সব ক্ষেত্রে চিকিৎসার কোনো তারতম্য নেই। শিশু রোগাক্রান্ত হলে মা-বাবার উচিত ঠা-া মাথায় বিপদের মোকাবেলা করা।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক
শিশুবিভাগ, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, শেরেবাংলানগর, ঢাকা
চেম্বার : ল্যাবএইড লিমিটেড, ধানম-ি, ঢাকা